মোঃ শহীদুল্লাহ বিশেষ প্রতিনিধি কক্সবাজার।
প্রতিবেশী দ্বারা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়ে স্থানীয় ভাবে তাৎক্ষণিক বিচার না পেয়ে স্বামী পরিত্যক্তা দুই সন্তানের জননী বিষ পান করে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে।
৮ জানুয়ারি রামু উপজেলার মিঠা ছড়ি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের স্বামী পরিত্যক্তা দুই সন্তানের জননী ইয়াসমিন নামের এক মহিলা দুপুর ২ টার দিকে নিজ গৃহে বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে জানা যায় ।
সুত্রে প্রকাশ ৭ জানুয়ারী সকাল ১০ টায় রামু উপজেলার মিঠা ছড়ি ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের মৌলভী ঘোনা ফরেস্ট অফিস চেইন্দা এলাকার নুরু প্রকাশ পাঙ্গাশ নুরুর ছেলে সাইফুল পার্শ্ববর্তী স্বামী পরিত্যক্তা দুই সন্তানের জননী ইয়াসমিন কে অমানুষিক ভাবে মারধর করে। মারধরের শিকার ইয়াসমিন আক্তার স্থানীয় ইউপি মেম্বার ফরিদের কাছে বিচার দেয়। ফরিদ মেম্বার স্থানীয় ভাবে বিচার করে দেওয়ার জন্য মৌলভী ঘোনা এলাকার সমাজের ছৈয়দ আলমের কাছে ইয়াসমিনকে যেতে বলেন।
নির্যাতিতা ইয়াসমিন ছৈয়দ আলমের কাছে গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত জানালে। ছৈয়দ আলম পাঙ্গাশ নুরুর বাড়িতে গিয়ে তার ছেলের মারধরের ঘটনা সম্পর্কে বললে, পাঙ্গাশ নুরু তার ছেলে সাইফুলকে নরম ছোট গাছ দিয়ে দুয়েক বারি দিয়ে বলেন বিচার শেষ। পাঙ্গাশ নুরু দাম্ভিকতার সহিত বলেন, এলাকায় তার পরিবারের বিচার কেউ করতে পারবেনা। পাঙ্গাশ নুরু তার ছেলের করা অপরাধ মতে বিচার না করে এক প্রকার বিচারের নামে প্রহসন করছে দেখে নির্যাতিত ইয়াসমিন সেই বিচার না মেনে স্থানীয় ছৈয়দ আলমকে সুষ্ঠু বিচার করে দেওয়ার জন্য বলেন । ছৈয়দ আলম বিচার করতে অপারগতা প্রকাশ করলে ইয়াসমিন নিজ বাড়িতে চলে যায়।
এদিকে স্থানীয় মেম্বারকে বিচার দেওয়ার কারণে এবং পিতার আস্কারা পেয়ে পাঙ্গাশ নুরুর সন্ত্রাসী ছেলে সাইফুল ৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় পুনরায় ৫/৬ জনের গ্রুপ নিয়ে ইয়াসমিনকে মারার জন্য ইয়াসমিনের ঘরে যায় বলে জানান স্থানীয় প্রতিবেশীরা। সন্ত্রাসী সাইফুলকে তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে আসতে দেখে, ভয়ে ইয়াসমিন নিজ ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে ঘরে অবস্থান করে বলে জানিয়েছেন ইয়াসমিনের বোন। সাইফুল ইয়াসমিনের ঘরে ঢুকতে বন্ধ দরজা ধাক্কাধাক্কি করে ব্যার্থ হয়ে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে দীর্ঘক্ষণ অবস্থান করে চলে যায় বলে জানিয়েছেন ইয়াসমিনের আট বছরের মেয়ে হ্যাপি মনি ।
পরদিন ৮ জানুয়ারী স্থানীয় মেম্বার ফরিদকে ইয়াসমিন ঘটনার বিস্তারিত খুলে বলেন এবং পুনরায় বিচার করে দেওয়ার জন্য বলে ইয়াসমিন। ফরিদ মেম্বার এদের বিচার করে উল্টো আবার স্থানীয় আওয়ামিলীগ নেতা ছৈয়দ আলমকে বুঝাতে বলে। ইয়াসমিন হতাশ হয়ে বাড়িতে আসলে প্রতিবেশী সন্ত্রাসী সাইফুল ও তার পিতা মাতারা সবাই মিলে নানা ধরনের অপ্রীতিকর অপমান জনক কথা বার্তা বলা শুরু করলে। পিতা মাতা হারা অসহায় ইয়াসমিন রাগে ক্ষোভে অপমানে ৮ জানুয়ারি দুপুর দুইটার দিকে নিজ ঘরে বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করে বলে জানিয়েছেন তার বোন।
প্রতিবেশীরা বিষ পানকারী ইয়াসমিনকে মুমূর্ষ অবস্থায় প্রথমে স্থানীয় মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করে। মা ও শিশু হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক বিষ পানকারীর অবস্থা আশঙ্কা জনক হওয়ায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। বর্তমানে সদর হাসপাতালের ৪র্থ তলায় মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে বলে জানা যায়। সদর হাসপাতাল সুত্র বর্তমানে রোগীর অবস্থা আশঙ্কা মুক্ত বলে জানিয়েছেন।
এই ঘটনার কারণ সম্পর্কে জানা যায় সাইফুল এলাকায় একজন মাদকাসক্ত যুবক। সে মদ খেয়ে একজন নারীর উপর বেআইনী ভাবে ফৌজদারি অপরাধ যোগ্য ঘটনা সংঘটিত করেছে বলে জানা যায়।
এই বিষয় সম্পর্কে স্থানীয় মেম্বার ফরিদুল আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করে ঘটনা জানতে চাইলে তিনি আমাদের প্রতিনিধিকে জানান, ইয়াসমিন নামের মেয়েটি তাকে বিচার দেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তবে সে ইয়াসমিনকে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামিলীগের সভাপতিকে ঘটনা সম্পর্কে একটু বুঝিয়ে রাখার জন্য বলেন এবং পরে তার সাথে দেখা করতে বলেন। যাতে একটি দিন ঠিক করে সংঘটিত ঘটনার বিচার করা যায়। এর পর ইয়াসমিন তার সাথে আর দেখা করেননি বলে জানিয়েছেন। তিনি আরো জানান ইয়াসমিনের বিষ পান করা সম্পর্কে সে জানেনা বলে জানিয়েছেন। আমাদের প্রতিনিধির মাধ্যমেই বিষ পান করার সংবাদ শুনেছেন। বিষ পানের ঘটনা শুনে ফরিদ মেম্বার ইয়াসমিনকে দেখতে সদর হাসপাতালে গিয়েছে বলে জানা যায়।
বর্তমানে ইয়াসমিন সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। বিশ্ব ছিন্নমূল মানবাধিকার সংস্থার কক্সবাজার জেলার সভাপতি মারজান চৌধুরী স্বামী পরিত্যক্তা শারীরিক নির্যাতনের শিকার ইয়াসমিনকে আইনি সহায়তা প্রদান করবেন বলে আমাদের প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন। এই ঘটনায় রামু থানায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন ইয়াসমিনের ভাই রোবেল।