হোয়াইট কালার ইয়াবা ডন দিদার ওরফে ডাকাত দিদারকে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ আটক করতে সক্ষম হয়েছে কক্সবাজার মডেল থানা পুলিশ। ধৃত ইয়াবা ডন ওরফে ডাকাত দিদারুল আলম ঝিলংজা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের পুর্ব মুক্তার কুল এলাকার দানু মিয়ার ছেলে। সে দীর্ঘদিন ধরে গোপনে মরন নেশা ইয়াবা কারবার চালিয়ে গেলেও এতদিন পুলিশি ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।
সোমবার একটি দেশীয় তৈরি কাটা বন্দুক, এক রাউন্ড তাজা কার্তুজ ও ৩০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ দিদারুল আলমকে(৪০) কলাতলী বাইপাস এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসময় মো. আমান উল্লাহ (৩২) নামে তার এক সহযোগি পালিয়ে যায়। দিদারের বিরুদ্ধে ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও হত্যার চেষ্টাসহ অর্ধ ডজন মামলা রয়েছে।
সোমবার বিকালে মাদক ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে দিদারকে আদালতে প্রেরণ করেন সদর মডেল থানা পুলিশ। কক্সবাজার সদর থানার এসআই প্রদীপ চন্দ্র দে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এসআই প্রদীপ চন্দ্র দে বলেন, ‘সোমবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে কলাতলী বাইপাস সড়কের পাশ থেকে দিদার নামে একব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে। ওই সময় তার এক সহযোগি পালিয়ে যায়। পরে দিদারের দেহ তল্লাশি চালিয়ে একটি দেশিয় তৈরি বন্দুক, এক রাউন্ড তাজা কার্তুজ ও পলিথিনে মোড়ানো ৩০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার বিকালে সংশ্লিষ্ট ধারায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করে আদালতে প্রেরণ করা হয় দিদারকে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে ডাকাত দিদার গোপনীয়তা অবলম্বন করে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়ে যায়। গত দুই বছর ধরে এলাকায় ইয়াবা ডন হিসেবে আলোচনায় এসেছে দিদার। ইয়াবা ব্যবসার ছোঁয়া পেয়েই আলিশান জীবন যাপন শুরু করে দিদার। নিজের এসব অপকর্ম আড়াল করতে ইয়াবার টাকায় বনে যান ‘আওয়ামী মটর চালক লীগ’ নামে একটি সংগঠনের জেলা সভাপতিও। তার নৈতিক চরিত্র স্খলন জনিত কারণে তাকে মটর চালক লীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
নিজ এলাকা খরুলিয়ার দরগাহ, মুক্তার কুলের সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, সে বিভিন্ন সময় এলাকার মসজিদ, সামাজিক সংগঠন সমুহতে মোটা অংকের টাকা দিয়ে নিজেকে সভা মাহফিলে অতিথি করতে বাধ্য করা হত। এক সময়ের দুর্ধর্ষ ডাকাত রাতারাতি বনে যায় রাজনৈতিক নেতা ও সমাজ সেবক। কিছুদিন আগে ডঃ মিজানুর রহমান আজহারী খরুলিয়া এলাকায় যে তাফসীরুল কোরান মাহফিল করে গেছেন সেই মাহফিল আয়োজকদের হাতে মোটা অংকের ডোনেশন করার তথ্যও রয়েছে।
এই হোয়াইট কালার ইয়াবা ব্যবসায়ীর টেকনাফ কক্সবাজার ঢাকা’য় বিচরণ ছিল ব্যাপক। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে নিজেকে অনেক সময় পরিবহণের মালিকও পরিচয় দেন তিনি। কক্সবাজারের কয়েকজন শীর্ষ মাদক কারবারির মধ্যে দিদারুল আলম অন্যতম বলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তথ্য ছিল। ইয়াবার টাকায় দিদার এখন ৩টি ট্রাক (ডাম্পার) এর মালিক। রয়েছে দু’টি নোহা গাড়ি, দু’টি কার, কয়েকটি সিএনজি টেক্সী ও নামে বেনামে মোটর সাইকেল। তার ছেলেও নিয়মিত আলিশান মোটর সাইকেল হাকান।
হোয়াইট কালার ইয়াবা ডন দিদার ওরফে ডাকাত দিদারের বিরুদ্ধে কক্সবাজারের স্থানীয় সংবাদপত্র দৈনিক আলোকিত উখিয়া ও বাংলা পত্রিকা একাধিক বার অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন। সেই সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ইয়াবা ডন দিদার দৈনিক আলোকিত উখিয়ার সম্পাদক ও সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্যদের বিরুদ্ধে মানহীন ও নতুন তথ্য প্রযুক্তি আইনে দু’টি মামলা করেছেন এবং দৈনিক আলোকিত উখিয়ার সম্পাদককে হত্যার হুমকি দিয়েছেন তার মুঠোফোনের মাধ্যমে। বর্তমানে ইয়াবা ডন দিদারের করা সেই মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
এই হোয়াইট কালার ইয়াবা ডন দিদারের শক্তিশালী একটি ইয়াবা সিন্ডিকেট রয়েছে। এই ইয়াবা সিন্ডিকেটে ঝিলংজা ইউনিয়নের স্থানীয় সরকার দলীয় রাজনৈতিক সংগঠনের একজন শীর্ষ নেতাও জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে। দিদারকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই ইয়াবা সিন্ডিকেটের মুল হোতাদের তথ্য পাওয়া যাবে বলে মনে করেন স্থানীয় বিজ্ঞ জনেরা। কক্সবাজার জেলা সদরের সচেতন মহল হোয়াইট কালার ইয়াবা ডন দিদারকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করার জোর দাবী জানিয়েছেন।